আফসানা রহমান (ছদ্মনাম) একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। নিজের পছন্দে বিয়ে করেছেন, তারপরও মনে খানিকটা ভয় ছিল নতুন পরিবার আর পরিবেশ নিয়ে। তবে শ্বশুরবাড়ির আন্তরিক আচরণ নতুন পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে খুব সাহায্য করেছে তাকে।

নববধূর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির সম্পর্ক কেমন হবে
ছবি: সংগৃহীত

তবে সমাজে ভিন্ন ঘটনাও আছে। এনজিওতে কর্মরত স্বপ্না জাহানের (ছদ্মনাম) মতো অনেকেরই শ্বশুরবাড়ির অভিজ্ঞতা প্রথম দিকে মোটেও সুখকর হয় না। তিনি বলেন, ‘কী করব, কাকে জিজ্ঞেস করব সবকিছু মিলিয়ে প্রথম থেকে বেশ অস্বস্তি হতো। তবে সময়ের সঙ্গে অস্বস্তি কাটিয়ে উঠেছি।’


বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিয়ে শুধু নর-নারীর বন্ধন নয় বরং দুটি পরিবারের সামাজিক মেলবন্ধনের সৃষ্টি করে। দুটি ভিন্ন পরিবার, ভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বিষয় থাকে এখানে। নববধূকে যেহেতু নতুন পরিবেশে আসতে হয় তাই মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের ভূমিকা বেশি।


  • নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য নববধূর প্রচেষ্টার সঙ্গে প্রয়োজন শ্বশুরবাড়ির মানুষজনের সহযোগিতার মনোভাব। পরিবারের নতুন সদস্যকে আপন করে নেওয়ার কাজটি মূলত তাদেরই করতে হবে।
  • নববধূকে শ্বশুরবাড়ির পরিবেশ সম্পর্কে শুরুতেই ধারণা দিয়ে দেওয়া ভালো। যেমন পরিবারের সদস্যদের কী অভ্যাস, কে কী পছন্দ করে সেটি সম্পর্কে আগে বলে দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি জেনে নিতে হবে তার পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কেও। এতে পরবর্তী সময়ে আর অহেতুক কোনো জটিলতা তৈরি হবে না।
  • ভাষার ব্যবহারে হওয়া উচিত সতর্ক। নববধূর সঙ্গে আন্তরিকতা নিয়ে কথা বলুন। এতে তিনি যেমন স্বস্তি পাবেন তেমনই তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে। নিজের চেনা পরিবেশ ছেড়ে আসার কষ্ট সামলে উঠে শ্বশুরবাড়ির অচেনা পরিবেশ ও জীবনযাপনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে এমন আচরণ খুব সহায়ক হবে নববধূর। নববধূরও চেষ্টা করতে হবে আন্তরিকভাবে কথা বলার।
  • স্বামী-স্ত্রীকে নিজেদের সময় কাটাতে সুযোগ দেওয়া উচিত। দাম্পত্য জীবনের প্রথম দিকেই বোঝাপড়ার বিষয়টি খুব জরুরি। তাদের বোঝাপড়া নিজেদের করে নিতে দিতে হবে। মাঝখানে পরিবারের সমদস্যদের মতামত সমস্যা তৈরি করতে পারে।
  • নববধূর ঘাড়ে কাজের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। প্রথমেই কোনো বড় কাজের দায়িত্ব দেওয়া উচিত নয়। নতুন বউ কাজ করতে চাইলে সকালের চা বানানো, বিকেলের নাশতা, ঘর গোছানো ও বাগান পরিচর্চার মতো ছোট ছোট কাজ তাকে দেওয়া যেতে পারে। তাকে অভ্যস্ত হতে দিন আগে।
  • প্রতিটি পরিবারে নিজস্ব নিয়ম থাকে। তাই বলে পরিবারে প্রবেশ করার সঙ্গেসঙ্গেই নববধূর ওপর তা চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। মানুষ একেক পরিবেশে একেক রকম অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে উঠে। নতুন পরিবেশ, নিয়মকানুনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে নববধূরও খানিকটা সময়ের প্রয়োজন। সময়ের সঙ্গে তিনি নতুন বাড়ির সঙ্গে মানিয়ে নেবেন। এ নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা উচিত নয়।
  • নতুন পরিবারে নববধূর সবচেয়ে কাছের মানুষ স্বামী। এ জন্য স্বামীর রয়েছে বাড়তি দায়িত্ব। নববধূর সুবিধা-অসুবিধার দিকটি সবার আগে বেশি খেয়াল রাখতে হবে তাকে। যেকোনো সমস্যায় দাঁড়াতে হবে পাশে। স্ত্রীকে নতুন বাড়িতে অভ্যস্ত করতে এবং সবার সঙ্গে একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে দিতে স্বামীকে বলিষ্ঠ ও কৌশলী ভূমিকা পালন করতে হবে। আর স্ত্রী যদি কর্মজীবী হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রেও সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে স্বামীকেই। তার কাজের গুরুত্ব ও কাজের জায়গা সম্পর্কে নিজের বাড়ির মানুষকে বুঝিয়ে বলতে হবে।
  • দীর্ঘদিনের চেনা পরিবেশ ছেড়ে, পরিবারের সদস্যদের রেখে যখন একজন নতুন পরিবেশে আসেন তখন বাবা-মা ভাই-বোনদের জন্য মন খারাপ হবে— এটি স্বাভাবিক। এ সময় তার সঙ্গে কথা বলুন, একসঙ্গে চা পান করুন কিংবা পারিবারিক আড্ডায় তাকে নিন। মাঝেমাঝে পরিবারের বিষয়ে তার মতামত নেওয়া হলে তিনি নিজেকে পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বলে মনে করবেন এবং সবাইকে আপন ভাবা তার জন্য সহজ হবে।

সবশেষে বলা যায়, বিয়ের পর আন্তরিক আচরণ দিয়ে আপন করে নিলে নববধূর জীবন যেমন সহজ হবে, তেমনি সারাজীবন দুই পক্ষের সুসম্পর্ক বজায় থাকবে।

dh