বাংলা গল্প মায়াবতী রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প Romantic Love Story, Romantic valobashar golpo
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প - Romantic Love Story |
গল্পঃ মায়াবতী
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ১৩
একটুপর নিশু বাসায় আসে। বাসায় এসে সব ঘটনা জানতে পেরে দৌড়ে হসপিটালে যায়। আর সেখানে গিয়ে শুনতে পারে তার বাবা হ্যাট অ্যাটাকের কারণে প্যারালাইজড হয়ে গেছে। নিশুর মা নিশুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। নিশুর উপর আকাশ ভেঙে পড়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার পুরো পৃথিবীটা শেষ হয়ে গেলো। কি করবে এখন সে। মাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করছিল নিশু আর মনে মনে বলছিল
- কেনো করলি এমন তুই নয়ন, কেনো? আমার উপর একটু ভরসা রাখতে পারলি না।
কিছুদিন পর মি. রহমানকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। মি. রহমান একজন বেসরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। আর তিনি অসুস্থ হওয়ায় তার চাকরিটা চলে যায়। সংসার সব দায়িত্ব এখন নিশুর উপর। নিশু পাগলের মতো এখন চাকরি খুজছে। তার পার্ট টাইম চাকরি দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব না।
নিশু অস্থিরভাবে ভাবছে বাবার দামি ঔষধপত্র, সংসারের খরচ কিভাবে সামলে সব। হসপিটালে থাকাকালীন তাদের জমানো টাকা বেশিভাগ খরচ হয়ে গেছে বাবার পেছনে। সবকিছুর ব্যবস্থা করতে পারবো তো আমি? হঠাৎ ফোন বেজে ওঠে। ফোন নিয়ে দেখে মিশির ফোন।এই কয়দিনের সবকিছুতে মিশিকে যেন একবারে ভুলেই গিয়েছিল। অনেকবার কল দিয়েছে মিশি কিন্তু মিশির ফোন ধরার সুযোগ পাইনি নিশু। নিশু ফোন ধরে হ্যালো বলতেই ও পাশ থেকে
- হ্যালো বলতে হবে না। কতোগুলো কল দিছি আমি আপনাকে? কোথায় ছিলেন এতোদিন? আমার কথা কি মনে আছে নাকি কক্সবাজার গিয়ে আমায় ভুলে গেছেন? এতো কল দিলাম একবার তো ধরলোই না আবার পরে ফোন বেক করারও প্রয়োজন মনে করেনি। আর এইদিকে আপনাকে নিয়ে টেনসন করতে করতে পাগল প্রায় আমি।
মিশির এমন কথা শুনে নিশুর ডুকরে কান্না আসছে। কি বলবে সে মিশিকে?
- কি হলো কিছু বলছেন না যে? সব ঠিক আছে তো? আপনি ঠিক আছেন?
নিশু নিজেেকে সামলে
- নাহ কিছু হয় নি। আমি ঠিক আছি।
মিশি নিশু কন্ঠে কষ্ট অনুভব করছে। গলা শুনেই বুজতে পারছে নিশু কান্না করছে অনেকবার।
- আপনার কন্ঠ তো অন্য কিছু বলছে আমায়। আপনি কষ্টে আছেন কোনো। প্লিজ কি হয়েছে বলেন একবার?
- না কিছু না। আসলে আমার বোনের হুট করে বিয়ে গেছে। বোনকে বিদায়ের কষ্টটা এখনো ভুলতে পারি নি।
- কিহ! আপুর বিয়ে গেছে কখন? আমাকে বললেনও না একবার?
- বললাম না হুট করেই বিয়ে হয়ে গেছে। পাত্রপক্ষের ইচ্ছায় তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে বিয়েটা। তাই একটু মন খারাপ। আর বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম তাই তোমার সাথে কথা বলতে পারি নি।
- সত্যি এই কারণের জন্য মন খারাপ আর অন্য কিছু নাই তো?
- নাহ! আচ্ছা একটু ব্যস্ত আছি পরে কথা বলি।
বলেই ফোনটা কেটে দিলো নিশু। কারণ মিশির সাথে সে বেশিক্ষণ মিথ্যে কথা বলতে পারবে না সে। নিশু ভালোভাবেই জানে যে মিশি তাকে নিয়ে সবসময় টেনসনে থাকে,তাই নিশু তার এসব কথা বলে মিশিকে আর টেনসন দিতে চায় না। তবে মিশির কাছ থেকে কথাটা লুকিয়ে কি ঠিক করেছি? এসব ভাবতে ভাবতে নিশু তার মায়ের গলার আওয়াজ শুনতে পায়। মায়ের আওয়াজ শুনে রুম থেকে বের হয় নিশু।
শুভর কাছ থেকে নিজের বাবার অবস্থা শুনতে পেরে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না নয়না। দৌড়ে চলে আসে বাবাকে দেখতে। তবে বাসায় পা রাখার আগেই তার মায়ের আওয়াজ শুনতে পায় নয়না।
- মুখপোড়ী, অপয়া, কেন এসেছিছ আবার এখানে? আমাদের মুখে চুন কালি মেরে রেখে গিয়ে দেখতে এসেছিছ আমরা মরে আছি নাকি বেচেঁ আছি।
নয়না তার মায়ের মুখে এসব কথা শুনে নিজের চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলো না।
- (কান্না জড়িত কন্ঠে) মা আমি শুধু একবার বাবাকে দেখতে এসেছি। আমি জানি আমার অপরাধ হয়েছে, তার জন্য যা শাস্তি দিবে তা মাথা পেতে নিবো। প্লিজ বাবার সাথে একটিবার দেখা করতে দাও?
- খবরদার, তোর ঐ মুখে আমাদের বাবা-মা ডাকবি না। তোর বাবা- মা মারা গেছে ঐদিনই। আর তোর এখানে কোনো জায়গা নেই। আর কখনো তোর এই মুখ দেখাবি না আমায়।
হঠাৎ নিশুকে রুম থেকে বের হতে দেখে নয়না ডাক দেয়
- ভাইয়া, প্লিজ আমাকে বাবাকে একবার দেখতে দে? মা আমাকে দেখা করতে দিচ্ছে না।
- কে তোর ভাইয়া? তোর কোনো ভাইয়া নেই।তুই যদি আমায় ভাইয়া মানতি তাহলে এই কাজ কোনদিনো করতি না। অন্তত আমার আসার অপেক্ষা করতি।
- না ভাইয়া এমন করে বলিস না। ঐদিন আমি বুঝতে পারি নি যে পালিয়ে যাওয়াতে বাবার এই অবস্থা হবে। প্লিজ ভাইয়া একবার দেখতে দাও বাবাকে।
- কোনো মতেই না। তোকে দেখলে বাবার অবস্থার আরো অবনতি ঘটতে পারে। তুই চলে যা এইখান থেকে। তোর জন্য আমরা সবাই মরে গেছি। আর কখনো আসবি না এইখানে।
নয়না আর কিছু বললো না। চোখের পানি ফেলতে ফেলতে চলে যায় সেখান থেকে।