বাংলা গল্প মায়াবতী রোমান্টিক ভালবাসার গল্প Romantic Valobasar Golpo, Romantic Love Story
রোমান্টিক ভালবাসার গল্প - Romantic Love Story Bangla |
গল্পঃ মায়াবতী
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ১৬
মিশি অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে। নিশুর বলা কথাগুলো তার কানে বাজছে। সত্যিই কি নিশু এতোদিন নাটক করছে আমার সাথে, এতোদিন যা বলছে যা করছে সবই অভিনয় ছিলো। নিশু কি কোনো দিনই আমাকে ভালোবাসে নি। তবে ঐদিন যখন দেখা করলাম তখন তো তার চোখে আমার প্রতি ভালোবাসা কেন দেখতে পেলাম। নাহ! এসব আমি কি ভাবছি। আমি জানি ও কোন একটা কারণে এমন করছে। হয়তো নিশু এখনো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে নি বলে এমন বলছে আমাকে। নিশু আমাকে খুব ভালোবাসে, ওর বন্ধুও তো আমাকে এটা বলছে। আর নিশুকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না। আমাকে বাবা মায়ের সাথে কথাটা বলতেই হবে।
অনেক সাহস নিয়ে মিশি তার বাবাকে গিয়ে বলে
- বাবা, আমি এ বিয়ে করতে পারবো না।
- (রেগে) কেন করতে পারবে না, এখন আবার কি ত্রুটি ধরে এনেছো পাত্রের? দেখো, পৃথিবীতে সবাই পারফেক্ট হয় না।
- (ভয়ে ভয়ে) না বাবা, সেই কথা নয়।
- তবে, কেন বিয়ে করবে না?
মনে অনেকটা সাহস জুগিয়ে মিশি বলে
- আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।
কথা শুনার পর মিশির বাবা অবাক আর রেগে বলে
- এসব কি বলছো তুমি?
- হ্যা বাবা। আমি একজনকে খুব ভালোবাসি। তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না আমি।
- কাকে ভালোবাসো, কে সে?
মিশি এবার তার বাবাকে নিশুর সম্পর্কে সব বলে। তার আশা ছিলো তার বাবা হয়তো তাকে বুঝবে। কিন্তু তা আর হলো না। মিশি বাবা আরো রেগে যায়, আর বলে
- এমন ছেলের সাথে আমি তোমার কখনোই বিয়ে দিবো না যে প্রতিষ্ঠিত না। যে নিজেই অন্যের উপর নির্ভর সে তোমাকে কিভাবে সুখে রাখবে?
- প্লিজ বাবা, ওকে কিছুদিন সময় দাও ও ঠিক একটা চাকরি নিয়ে তারপর তোমাকে আমাদের বিয়ের জন্য প্রস্তাব পাঠাবে।
- ওই ছেলেকে সময় দিতে গিয়ে আমি এতো ভালো পাত্র হাত ছাড়া করতে পারবো না।
এবার মিশি তার বাবার পায়ে পড়ে কান্না করতে শুরু করলো।
- প্লিজ বাবা, আমি তোমার পায়ে পড়ছি, আমার সাথে এতোটা অন্যায় করো না। আমি নিশুকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। ওকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।
- ওঠো বলছি আমার পা ছেড়ে। সব বাবাই তার মেয়েকে এমন ছেলের হাতে তুলে দিতে চাই যে তাকে বিয়ের পরে সুখে রাখবে। আর আমিও তাই করছি। তোমাকে আমার পছন্দের এই ছেলেকেই বিয়ে করতে হবে। আর এখন তোমার বিয়ে ১ মাস পরে নয় আগমী ৭ দিনের মধ্যেই হবে। আমি পাত্রপক্ষের সাথে কথা বলে বিয়ের তারিখটা এগিয়ে নিবো।
বলেই চলে যায় মিশির বাবা। মিশি ঐখানেই বসে বসে কাঁদতে লাগলো। মিশি অনেক আশা করে তার বাবাকে এই কথাটা বলার সাহস জুগিয়েছিলো। কিন্তু এখন তো সব উল্টো হয়ে গেলো। কি করবো আমি এখন? নাহ! নিশুকে জানতে হবে সব। সে যদি বাবার সাথে কথা বলে বাবা হয়ত মেনেও যেতে পারে।
মিশি নিশুকে কল করে, কিন্তু নিশু কল ধরছে না তার। হয়তো ইচ্ছে করেই ধরছে না।
নিশুকে খুব প্রয়োজন এখন মিশির, এটা নিশু খুব ভালো করেই জানে। তবে মিশিকে সুখে দেখতে হলে তাকে মিশির জীবন থেকে দূরে সরে যেতেই হবে।
বারান্দায় পায়চারি করতে করতে নিশু ভাবছে, আজ ৩ দিন ধরে বাবার ঔষধ নেই, ঔষধ না থাকায় বাবার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। যে করেই হোক টাকা যোগাড় করতে হবে। কিন্তু আমি তো এমনিতেই অনেক ঋণ করে ফেলেছি। আর টাকা কে দিবে আমায়।
হঠাৎ তার মা তাকে ডাক দিয়ে বললো
- এই নে।
- এগুলো কি? (অবাক হয়ে)
- এগুলো আমার গহনা। এগুলো বিক্রি করে তোর বাবার জন্য ঔষধ নিয়ে আয়।
এ কথা শোনার পর নিশুর কান্না চলে আসে। আর বলে
- না মা, এগুলো আমি নিতে পারবো না। তুমি কিভাবে ভাবলে যে টাকার জন্য আমি তো গহনা গুলো বিক্রি করবো?
- আমি জানি তোর কাছে এখন টাকা নেই। মাস শেষে আবার টাকা পাবি। আর এইদিকে তোর বাবার অবস্থাও খারাপ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। আমার এই গহনাগুলো না হয় বন্ধক রেখে ঔষধগুলো কিনে আন। পরে না হয় টাকা ফেরত দিয়ে গহনা আবার নিয়ে আসবি।
নিজেকে আজ খুব অসহায় লাগছে। ছেলে হয়ে তার বাবা মায়ের জন্য কিছু করতে পারছে না। আজ টাকার জন্য তাকে তার মায়ের গহনা বন্ধক রাখতে হচ্ছে। মনে মনে বলছে নিশু, হে আল্লাহ, আজ এতো অসহায় কেনো বানালে আমায়।