বাংলা গল্প মায়াবতী রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প - Romantic Bangla Golpo, Bangla Romantic Golpo
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প - Romantic Bangla Golpo |
গল্পঃ মায়াবতী
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ১৭
বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে কিন্তু মিশি এখন পর্যন্ত একবারোও নিশুর সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি। অয়নকেও ফোন করছিলো মিশি সেও ফোনটা ধরে নি। অবশেষে মিশি নুহার ফোন দিয়ে কল দেয় নিশুকে। নাম্বারটা অপরিচিত থাকায় নিশু কলটা রিসিভ করে।
- হ্যালো
হ্যালো বলতেই নিশু আর বুজতে বাকি রইলো না এটা মিশির কন্ঠ। সে মিশির সাথে কোনো কথা বলতে চায় না। তাই ফোনটা রাখতে যাবে তখন অপর পাশ থেকে মিশি বলে ওঠে
- প্লিজ, ফোনটা রাখবেন না। আমার জানি আপনি আমার সাথে এমন কেনো করছেন।
নিশু কিছুটা চমকে ওঠে জিজ্ঞেসা করে
- কেনো করছি?
- আপনি যতই বলেন আপনি আমায় ভালোবাসেন না, এতোদিন টাইম পাস করছেন, আমি তা বিশ্বাস করি না। আপনিও আমাকে ভালোবাসেন এটা আমি ভালো করেই জানি। আর আপনি কোনো কারণে আমাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছেন যেন আমি আপনাকে ছেড়ে চলে যাই।
নিশু বিস্মিত হয়ে মেয়েটা তার সব না বলা কথা কিভাবে বুজে যায়। কিন্তু এখন ওর সাথে দুর্বল হলে চলবে না। মিশির জীবন থেকে আমায় সরে যেতেই হবে এতেই ওর মঙ্গল।
- দেখো, তোমার যা মনে করার করতে পারো। কিন্তু আমি তোমায় ভালোবাসি না। আমি নতুন একজনকে পেয়ে গেছি। তাকেই আমি বিয়ে করবো।
- আমি জানি এসব কিছুই হয় নি। আমি মা- বাবার কাছে আমাদের কথা বলে দিছি। আপনি যদি বাবার সাথে একবার কথা বলেন তাহলে হয়ত সব ঠিক হয়ে যেতে পারে।
- কি কথা বলবো, আমি কোনো কথা বলবো না। তোমার মতো একটা মেয়েকে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে নেই আমার।
-প্লিজ, এভাবে বলবেন না। আগমী শুক্রবার বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। আমি আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।
বিয়ে কথা শুনে নিশুর হৃদয়ে আচঁড় দিয়ে ওঠে। তার মায়াবতীর অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে যাবে। খুব কষ্ট হচ্ছে তার। তবে সে তো এটাই চেয়েছিল। ইচ্ছে করছে মিশিকে এখনি সব সত্যি বলে দিতে। কিন্তু মিশির ভালোর জন্য মিশিকে নিজের জীবন থেকে দূর করতেই হবে
- বিয়েটা করে ফেলো। সুখে থাকবে। আর আমার কাছ থেকে কিছু আশা করো না। আর কলও দিয়ো না। রাখি।
বলেই ফোনটা কেটে দিলো।
চোখের জল অনবরত পড়ছে চোখ থেকে মিশির। মিশির শেষ আশাটুকুও শেষ হয়ে গেলো। শেষ পর্যন্ত নিশুও তাকে বুঝার চেষ্টা করলো না।
গায়ে হলুদের রাত। মিশিকে সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে। মিশি কতো স্বপ্নই না দেখেছিলো বিয়ের দিনগুলো নিয়ে। নিশুর কি একটিবারও কষ্ট হয় না আমার জন্য।
বিয়ের বাড়িতে সবাই হাসিখুশি, শুধু মিশির মুখেই কোনো হাসি নেই। তার ইচ্ছে করছে সব কিছু ছেড়ে পালিয়ে যেতে কোথাও। কিন্তু পালাবে কোথায়,পালানোর জায়গা নেই। নিশুকে খুব মনে পড়ছে তার। দেখা করতে ইচ্ছে করছে, তার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে। নিশুকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদতে ইচ্ছা করছে তার। কিন্তু কিছুই করতে পারবে না।
অনুষ্ঠান শেষে মিশি শেষবারের মতো আবার কল করলো নিশুকে।
নিশু বসে বসে তার এতোদিনের জমানো টাকাগুলো গুনছে। এই টাকা দিয়ে হয়তো সংসারের অভাবটা কিছুটা কমবে। এছাড়া পাওনাদাররাও এখন তাদের টাকা ফেরত চাচ্ছে তাদের টাকাও শোধ করতে হবে।৷ এমন সময় ফোনটা বেজে ওঠে। মিশির কল দেখে তার মনে পড়ে যায় কাল তো মিশির বিয়ে। চোখ থেকে দুফোঁটা জল পড়ে যায়। মনে মনে বলে,
-হায়, আমার নিয়তি। আজ কোথায় এনে দাঁড় করালে। কতো স্বপ্নই না দেখেছিলাম আমরা আমাদের বিয়ে নিয়ে। লাল বেনারসি শাড়ি কিনবো আমার মায়াবতীর জন্য। সেই শাড়িটা পড়ে মিশি বিয়েতে আমার সামনে বসে থাকবে। আর আজ এই সব কিছুই হতে যাবে অন্য কারোর জন্য সাথে আমার মায়াবতীও অন্য কারোর হবে। হে আল্লাহ, কেনো কষ্ট দিচ্ছো আমায় এতো। আর কতো পরীক্ষা নিবে আমার।
মিশি কল দিয়েই যাচ্ছে। নিশুর ইচ্ছে করছে মিশির সাথে কথা বলতে। কিন্তু এখন সে মিশির সাথে কথা বললে নিজেকে সামলাতে পারবে না। দুর্বল হয়ে যাবে। নিশু ফোনটা অফ করে দেয়। আর একটা ঘুমের বড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ে, যেন স্মৃতিগুলো চোখে না ভেসে ওঠে আর।
নিশুকে এতো কল দেওয়ার পর এখন যখন ফোনটা অফ বলছে তখন মিশির বুঝার বাকি রইলো না যে নিশু তার সাথে কথা বলতে চায় না। মিশি ভেবে নিয়েছে তাকে এখন কি করতে হবে। সে কিছু কথা রেকর্ড করে নিশুকে সেন্ড করে। জানে নিশু এখন রেকর্ডটা চেক করবে না। আর যখন চেক করবে তখন তার কাছে আর সময় থাকবে না। রেকর্ডটা সেন্ড করার পর রুম থেকে বের হয়ে তার মা বাবার রুমে যায়। বাড়ির সবাই এখন ঘুমচ্ছে। মিশি দূর থেকে তার ঘুমন্ত বাবা-মাকে দেখে আর মনে মনে বলে আমাকে মাফ করে দিও বাবা-মা। কিছুক্ষণ তার বাবা-মাকে দেখার পর সে নিজের রুমে গিয়ে রুমের দরজাটা ভিতর থেকে লাগিয়ে দেয়।