বাংলা গল্প মায়াবতী রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প Best Romantic Love Story, Bangla love story, Romantic bangla love story
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প - Best Romantic Love Story |
গল্পঃ মায়াবতী
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
শেষ পর্ব
সকাল ৮টা বাজে। অয়নের ডাকে নিশুর ঘুম ভাঙ্গে। অয়নকে এতো সকাল নিজের বাসায় দেখে আচর্য হয়ে জিজ্ঞেসা করে
- কিরে এতো সকালে এখানে, কোন কাজ ছিলো?
- তোর জন্য একটা খুশির সংবাদ আছে।
- কি খুশির সংবাদ?
পকেট থেকে একটা এনভেলপ বের করে বলে
- এই নে তোর চাকরির কার্নফরমেশন লেটার।
নিশু কিছুটা বিস্মিত হয়ে অয়নের দিকে তাকায়।
-হ্যা তো চাকরিটা হয়ে গেছে। আমি বসকে এমনভাবে পটিয়েছি যে বস তোকে চাকরিটা না দিয়ে পারলোই না।
নিশু নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলো না। ওঠে অয়নের জড়িয়ে ধরে। কান্না জড়িত কন্ঠে বলে
- সত্যিই আমার চাকরিটা হয়ে গেছে। এই চাকরিটা হলে তো আমার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বাবার ঔষধ আর মিস হবে না। মার গহনাগুলো ফিরিয়ে আনতে পারবো।
তখন অয়ন বলে ওঠে
-আর মিশি?
মিশির কথা শুনে নিশুর মনটা ভার হয়ে যায়। খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলে
-আজ তো ওর বিয়ে।
অয়ন কিছুটা চমকে ওঠে বলে
- বিয়ে মানে! তুই ওকে ফোন দিয়ে বল বিয়ে না করতে। ওকে সব সত্যিটা বলে দে। এই কদিনে মেয়েটাকে তুই অনেক কষ্ট দিয়েছিস। আর কষ্ট দিস না। এবার তো তোর চাকরিও হয়ে গেছে এবার তো তুই ওকে বিয়ে করতে পারবি?
-হুম। কিন্তু!
- আর কিন্তু না তুই ওকে ফোন দে।
অয়ন কথায় নিশু ফোন টা অন করে মিশিকে কল দিতে যাবে তখনি মিশির ভয়েস রেকর্ডটা আসে। নিশু ভয়েস রেকর্ডটা অন করে
- শেষবারের মতো আপনার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শেষ ইচ্ছাটাও পূরণ হলো না। আপনাকে কিছু কথা বলার ছিলো তাই এই রেকর্ডটেই বললাম। আমি জানি আপনি কোনো একটা কারণে আমাকে নিজের কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন। আপনি চান আমি অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হই। কিন্তু আমার পক্ষে অন্য কাউকে বিয়ে করা সম্ভব না। অনেক বেশি ভালোবাসি আপনাকে। আপনার জায়গা অন্য কাউকে দেওয়া সম্ভব না। অন্য কাউকে বিয়ে করে আমি নিজের সাথে সাথে ঐ মানুষটাকেও ধোকা দিব যার সাথে আমার বিয়ে হবে। একথাটা আমি সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু না আপনি বুঝলেন, না আমার বাবা-মা। ইচ্ছে ছিলো শেষ নিঃশ্বাসটা আপনার বুকে মাথা রেখে ত্যাগ করব, কিন্তু সেটা আর হলো না। আপনাকে আমি আমি এতোটা ভালোবেসেছি যে তা অন্য কাউকে ভালোবাসা সম্ভব না। তাই চলে যাচ্ছি চিরদিনের জন্য। আর ডিসটার্ব করতে আসবো না আপনাকে। ভালো থাকবেন।
রেকর্ডটা শুনে ফোনটা হাত থেকে পরে যাই নিশুর। দু কদম পিছিয়ে যায় সে। অয়ন বলে ওঠে
- মিশি কিছু করে বসে নি তো?
অয়নের দিকে তাকিয়ে নিশু বলে
- আমাকে মিশির কাছে যেতে হবে।
বলেই সে দৌড় দিয়ে বাহির চলে যায়। নিশুর পিছনে অয়নও ছুটে।
সকাল থেকে মিশির মা মিশিকে ডাকছে, কিন্তু মিশি রুমের দরজা খুলছে না। অনেকক্ষণ ডাকার পর মিশির মা কিছুটা ভয় পেয়ে ওঠলো।মিশির বাবাকে ডাক দেয় মিশির মা। মিশি দরজা না খুলায় শেষে দরজাটা ভাঙ্গা সবাই রুমে ডুকে।
মিশি বিছানায় চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে পড়েছে। হাতে খালি ঘুমের ঔষধের বোতল। আর তার পাশে একখানা চিরকুট। চিরকুটে লিখা ছিলো আমার শেষ ঠিকানা আমি খুজে নিয়েছি। তোমারা সুখে থেকো বাবা-মা।
বিয়ে বাড়ি এখন মরণ বাড়িতে পরিণত হয়ে গেছে। সবার হাসি এখন কান্নায় রূপ নিয়েছে।
মিশির বাবা-মাও তাদের ভুল বুজতে পেরেছে। কিন্তু ভুলটা বুজতে অনেকটা দেরি হয়ে গেলো তাদের।
৩ ঘন্টা পর নিশু মিশিদের এলাকায় পৌঁছালো। নিশু মিশিদের বাসা না চিনলেও মিশি একবার বলে ছিলো তাকে কিভাবে মিশিদের বাসায় যেতে হয়। সেইভাবেই নিশু আর অয়ন এগুচ্ছে। তবে বেশিদূর যেতে হয়নি তাদের। কিছুদূর যেতেই নিশু একটা খাটকিতে করে লাশ নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে পায়। খাটকির পাশে মিশির বাবাকে দেখে নিশু সেখানেই দাড়িয়ে পড়ে। মিশির বাবার ছবি নিশু দেখেছিলো। নিশু দাঁড়িয়ে থাকা দেখে অয়ন জিজ্ঞেস করে
- কিরে এখানে দাঁড়িয়ে পড়েছিস কেনো? কি হলো?
নিশু নিজের শরীরের সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। সেখানেই মাটিতে হাটু ভেঙ্গে বসে বসে। তার হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। চারপাশের কোনো শব্দ তার কানে আসছে না। মনে হয় এখনি, তার হৃদয়টা বন্ধ হয়ে যাবে।
নিশু এভাবে পড়ে যেতে দেখে অয়নের বুঝতে কিছু বাকি রইলো না। সে নিশুকে উঠানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারছে না। হঠাৎ অয়ন বলে ওঠে
- তুই কি শেষবারের মতো মিশিকে দেখবি না?
এতোক্ষণ অয়ন কোন কথায় নিশু শুনতে পারচ্ছিলো না। হঠাৎ অয়নের এই কথাটা নিশুর কানে বেজে ওঠে। এতোক্ষণে তার হুস ফিরলো। পিছনে তাকিয়ে দেখলো খাটকি গোরস্থানের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নিশু অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে দৌড়ে গোরস্থানের ভিতরে যাই।
নিশু আর অয়নকে দেখে সেখানে উপস্থিত সবাই অবাক হয়। কেউ তাদের না চিনলে মিশির বাবা নিশুকে এতোক্ষণে চিনে ফেলেছে। নিশু দৌড়ে গিয়ে মিশির বাবার পায়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে
- আংকেল, আমাকে মাফ করে দেন। মিশির এ অবস্থার জন্য আমি দায়ী। আমি তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি তাই মিশি এমনটা করেছে। তার জন্য আপনি আমাকে যা শাস্তি দিবেন তাই মাথা পেতে নিবো।
তখন অয়ন বলে ওঠে
- আংকেল নিশু মিশিকে অনেক বেশি ভালোবাসে। প্লিজ আংকেল শেষবারের মতো ওকে মিশিকে একবার দেখতে দেন।
অয়নের অনেক রিকুয়েষ্টের পর মিশির মুখটা খোলে দেওয়া হয় নিশুকে দেখার জন্য। নিশু যখন সামনে যায় নিশুর মনে হচ্ছে মিশি তার উপর রাগ করে শুয়ে আছে।
- বড্ড অভিমান করে শুয়ে আছো? তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি নাহ? দেখো, আমি চলে এসেছি তোমার কাছে। এখন তুমি যা শাস্তি দিবে তাই মাথা পেতে নিবো। তুমি ঠিক বলছিলে যে আমি এতোদিন অভিনয় করেছিলাম তোমাকে নিজের কাছ থেকে দুর করার জন্য। যেন তুমি অন্য কারো সাথে সুখে থাকো। কিন্তু তুমি আমাকে এভাবে ছেড়ে চলে যাবে তা আমি কখনো কল্পনাও করি নি। এই কষ্ট তো তোমাকে অন্য কারো সাথে দেখার চেয়েও বেশি বেদনাদায়ক।
পকেট থেকে চাকরি কর্নফরমেশন লেটার বের করে বললো দেখো আমার চাকরিও হয়ে গেছে। তোমাকে আর কখনো কষ্ট দিবো না। তোমাকে আর কখনো নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিবো না। তুমি চাইলে এখনি আমরা বিয়ে করতে পারি। প্লিজ একবার ওঠো। দেখো, আমি কান ধরে মাফ চাইছি, প্লিজ ওঠো। চিৎকার দিয়ে কান্না করতে লাগলো নিশু
কিছুক্ষণ পর মিশির বাবা অয়নকে ইশারা দিলো নিশুকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। কবর দেওয়ার সময় হয়ে গেছে। নিশু এখনো মিশির পাশেই বসে কাঁদছে। অয়ন নিশুকে বললো
-নিশু ওঠে পড়। কবর দেওয়ার সময় হয়ে গেছে।
কথাটা শুনা মাত্রই নিশুর হৃদয়টাতে খামছে ওঠে। সে আবার মিশির বাবার পায়ে গিয়ে ধরে বলে
- প্লিজ আংকেল, মিশিকে কবর দিবেন না। ওর অনেক কষ্ট হবে। ও আমার উপর রাগ করে শুয়ে আছে। এখনি উঠে পড়বে। মিশি প্লিজ ওঠো। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
এবার অয়ন সহ আরো একজন নিশুকে ধরে দূরে সরিয়ে নেয়। কবর দেওয়ার কাজ শুরু হলো। নিশু জোর খাটিয়ে ছোটার চেষ্টা করছে আর চিৎকার করে বলছে প্লিজ মিশিকে কবর দিবেন না। আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।
কবর দেওয়ার কাজ শেষ। একে একে সবাই চলে যাচ্ছে। নিশু এখনো সেখানেই দাড়িয়ে আছে। এখন আর কথা বলছে না, কাদছেও না। একদম নিস্তেজ হয়ে গেছে। পেছন থেকে কারো ডাক শুনতে পেল অয়ন। পেছনে ফিরে দেখে একটি মেয়ে।
- ভাইয়া, আমি নুহা। মিশির বান্ধবী। এই যে এই প্যাকেটটা নিন। এতে মিশির কিছু জিনিস যা নিশু ভাইয়া মিশিকে দিয়েছিলো। কালকে মিশি আমাকে এগুলো দিয়ে বলেছিলো আমি যেন নিশু ভাইয়াকে এগুলো ফিরিয়ে দেই।
অয়ন প্যাকেট নিলো। আর নিশুকে অনেক বুঝিয়ে ওখান থেকে নিয়ে তাদের বাসায় চলে যায়।
২ বছর পর। আজ নিশু অনেক বড় কোম্পানিতে চাকরি করে। এখন তার কাছে বাড়ি-গাড়ি সব আছে। নিশুর বাবাও এখন প্রায় সুস্থ। নয়না আর অভিকেও তারা মেনে নিয়েছে। তবে ভালো নেই নিশু। সে এখনো মিশির মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী ভাবে। এখনো মাঝরাতে মিশি বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে ঘুম থেকে। তার দেওয়া নীল শাড়িটা জড়িয়ে ধরে ঘুমায়। মাঝে মাঝে মিশির অভিযোগে লিখা সেই ডাইরিটা পড়ে।আকাশের দিকে তাকিয়ে তারার মাঝে মিশিকে খুজে বেড়ায়। তবে এসবের মধ্যেও নিশু খুশি। তার মায়াবতীর এসব স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকতে চায় সে সারাজীবন।