অপূর্ণতা - Bangla Sad Love Story - বাংলা গল্প, Bangla sad story, Heart touching sad love story in Bengali, Bangla koster golpo

অপূর্ণতা, Bangla Sad Love Story, বাংলা কষ্টের গল্প, Heart touching sad love story in Bengali, Bangla sad story, Bangla koster golpo, bangla sad golpo, bengali sad love story, sad story bengali, sad love story bengali
অপূর্ণতা - Bangla Sad Love Story - বাংলা কষ্টের গল্প

অপূর্ণতা
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা


আমার সামনে আজ আমার এক্স হাজবেন্ডকে কাদঁতে দেখে মনে বড় প্রশান্তি লাগছে। মনে হচ্ছে ৭ বছর আগের লাগা ঘা তে মলম লাগার মতো শান্তি আজ মনের মধ্যে পাচ্ছি আমি। আমি অরুণি আর আজ যে আমার সামনে বসে আছে সে আমার এক্স হাসবেন্ড আদিল।

আজ থেকে ৭ বছর আগে এই মানুষটার সাথে সংসার বেঁধেছিলাম। লাভ ম্যারেজ ছিলো আমাদের। নিজের পরিবারের সকলের বিরুদ্ধে গিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম আদিলকে। মেডিকেলে পড়েও ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছেড়ে দিয়েছিলাম আদিলের জন্য। নিজের সব স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে আদিলের সাথে খুশি থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম। তবে এই সিদ্ধান্তই আমার জীবনে কাল হয়ে দাড়ায়।

আদিল আর আমি যখন পালিয়ে বিয়ে করি তখন দুজনের পরিবারই মেনে নেয় নি আমাদের। তাই দুজনে শহরে একটা বাসা ভাড়া নিই। আদিল কম বেতনের চাকরি করতো বিধায় আমার লেখাপড়ার খরচ সে নিতে পারবে না। তাই আদিলের কথা ভেবে আমি পড়ালেখাটা ছেড়ে দেই। আদিলের সুখেই নিজের সুখ খুজতে থাকি। বিয়ের পর দেড় বছর খুব ভালোই কেটেছে আমাদের।

তবে একদিন বাজার করে বাসায় ফিরার সময় দেখলাম একটা রেস্টুরেন্ট থেকে আদিল আর একটি মেয়েকে একসাথে বের হতে দেখে নিজের পায়ের নিচের মাটি সরে যায়। মেয়েটি আদিলকে এমনভাবে ধরে রেখেছিলো দেখে মনে হচ্ছিল না যে মেয়েটি তার অফিসের কলিগ বা কোন ফেন্ড। আমি সাথে সাথে আদিলকে ফোন দেই। ফোনটা দেরি করে ধরে সে। আমি জিজ্ঞেসা করি সে কোথায়? কি করছে? তার জবাব শুনে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। সে বলল সে অফিসে, এখন ব্যস্ত আছে কাজ নিয়ে। অথচ একটু দূর আড়াল থেকেই আমি তাকে দেখতে পারছিলাম। নিজের চোখের পানি আর আটকে রাখতে পারলাম না। বাজার নিয়ে বাসায় চলে আসি। আদিল যখন বাসায় আসে তার হাসি মুখ দেখে কেউ তার উপর সন্দেহই করতে পারবে না। আদিলকে কিছু জিজ্ঞেসা করারও সাহস পাচ্ছিলাম না। উল্টো নিজের মনকে বোঝাচ্ছি হয়তো আমি ভুল দেখেছিলাম।

ইদানীং মাঝরাতে আদিল ওয়াসরুমে গিয়ে কারো সাথে কথা বলে। আমি কিছু জিজ্ঞেস করলে কথা এড়িয়ে দেয়। অথচ ওয়াসরুমে সামনে গিয়ে দাড়ালেই তার গলার ফিস ফিস শব্দ আমি স্পষ্ট শুনতে পাই। কিন্তু তার এড়িয়ে চলা কথাগুলো আমার বুকে কাটার মতো আঘাত করে। তাকে এতোটাই ভালোবাসতাম যে তার মিথ্যে কথাগুলোও সত্য মেনে নিতাম তাকে হারানোর ভয়ে।

একদিন আদিল ভুল করে ফোন না নিয়ে অফিসের জন্য বের হয়ে যায়। হঠাৎ তার ফোনে কল আসে। ফোনটা আমি রিসিভ করে কথা বলতে যাবো তখনি অপর পাশ থেকে কোনো মেয়ে বলে ওঠলো
- বাবু, কোথায় তুমি? এখনো আসছো না কেনো?
কথাটা শুনে আমার হৃৎস্পন্দন কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো হয়ে গেল। মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছিলো না। অনেকক্ষণ চুপ থেকে যখন কিছু বলতে যাবো তখনি পেছন থেকে হেচকা ফোনটা টান দেয় আদিল। আর বলে
- তোমাকে কতবার না করছি আমার ফোন না ধরতে। কোনো কল আসলে রিসিভ না করতে।
আদিলের এসব কথা শুনে যখন জিজ্ঞেসা করলাম মেয়েটা কে ছিলো? তখন আদিল এমন ভাব নিলো যে সে কিছুই জানে না। সে নাম্বার দেখে বললো
- এটা তো রং নাম্বার। তোমার কি আমার উপর বিশ্বাস নেই? সন্দেহ করো আমাকে?
আদিলের এমন প্রশ্ন শুনে কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। আদিল কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে পরে ব্যস্ততা দেখিয়ে চলে যায় অফিসে।
আমার বিশ্বাস হচ্ছিলো না এটাই সেই আদিল যে আমার প্রেমে পাগল ছিলো। একদিন কথা না বললেই যে ছটফট করতো। আমাকে নিয়ে কতো কবিতা লিখতো। আর আজ সে কতো সুন্দর করে মিথ্যা কথা বলছে। যার চোখে এতোদিন ভালোবাসা দেখতে পেতাম সে এখন আর আমার চোখে চোখ রাখতে পারে না। সবসময় ব্যস্ততা দেখায় আমার সাথে। আর আমিও কিছু বলতে পারছিলাম না। ভালোবাসার মায়াটা এতোটা বেশি ছিলো যে তাকে কিছুতেই হারাতে চাইতাম না।

২ মাস পর আমি জানতে পারি আমি মা হতে চলেছি। ভেবেছিলাম আদিলকে এটা বলার পর সে হয়তো অনেক খুশি হবে। এই সন্তান জন্য হয়তো সে আগের মতো হয়ে যেতে পারে। তবে এর কিছুই হলো না। উল্টো সে আমাকে এবোশন করতে বলে। শুনে আমার পায়ের নিচের মাটি সরে যায়। আমি কারণ জানতে চাইলে সে আমাকে বলল সে এতো তাড়াতাড়ি সন্তান নিবে না। বিয়ের ২ বছর পর আদিল মুখ থেকে এই কথা শুনবো কখনোও আশা করিনি। অবশ্য কারণটা আমি ঠিকই জানি। সেদিন ধৈর্য্যের সব বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এতোদিন আদিলকে হারানোর ভয়ে চুপ ছিলাম তবে এখন আমাকে আমার সন্তানের জন্য লড়তে হবে। আমি আদিলকে ওই সব কিছু বলি যা এতোদিন আমার মনে ছিলো। আদিলের নিজ দোষ লুকানোর চেষ্টা করে। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক তর্কাতর্কিও হয়। কিন্তু এক পর্যায়ে আদিল আমার উপর হাত তুলে। আমাকে বিশ্রী ভাষায় গালাগালি করে। এক সময় আমাকে এমন ভাবে ধাক্কা দেয় যে মেঝেতে পড়ে যায় আর পেটে ব্যাথা পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। যখন চোখ খুলি আমি হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি। জানতে পারলাম আমার পেটের বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু তখনও আদিল আমার সাথে ছিলো না। আমি অনেক কেঁদেছিলাম সেদিন। কিন্তু আদিলের এসব দেখার সময় নেই। আমার এ অবস্থা জেনে আমার মা-বাবা ছুটে আসে হসপিটালে। কদিন আর রাগ করে থাকবে আমার সাথে। শত হলেও আমি তাদের মেয়ে। মা-বাবা যখন এ অবস্থার কথা জিজ্ঞাসা করে তখন আমি মিথ্যা বলি। আমার ভুলের জন্য তাদের কষ্ট দিতে পারি না আমি। সেদিন মাকে পাশে পেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিলাম আমি।

১০ দিন হসপিটালে থাকার পর বাসায় আসি। এই ১০ দিনে মাত্র দুবার দেখা করতে গিয়েছিল আদিল আমার সাথে। তার কোন কষ্ট নেই আমার জন্য। এটাই তো চেয়েছিলো সে। আমি মানসিকভাবে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। ইচ্ছে করছিলো না আদিলের কাছে ফিরে যেতে। তবে না গেলে মা-বাবাকে কি জবাব দিবো। তাদের কষ্ট দিতে চায় না আর। তখন প্রায় আদিল লেট করে বাসায় ফিরতো এমনকি মাঝে মাঝে ডিংকস্ করেও। সে যখন রাতে অন্য মেয়েদের সময় দিতো তখন বাসার চার দেয়ালের মাঝে বসে বসে আমি কাঁদতাম। কারণ কিছুই করার ছিলো না আমার। ইচ্ছে করতো সব কিছু ছেড়ে কোথাও পালিয়ে যাই।

কিছুদিন পর আদিল আমার মুখে ডিভোর্স পেপার ছুড়ে মেরে বলে সে আমার সাথে আর থাকতে চায় না। সে অন্য একজনকে ভালোবাসে তাকে এখন বিয়ে করতে চায়। সেই মেয়ের বাবা অনেক ধনী তাই আদিলের পরিবারও সেই মেয়েকেই পুত্রবধু হিসেবে মেনে নিবে। আমাকে বিয়ে করে সে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছে। কথাটা শুনে আকাশ ভেঙে পড়েছিলো আমার মাথায়, বিশ্বাস হচ্ছিলো না এই সেই আদিল যাকে আমি ভালোবাসে বিয়ে করেছিলাম। যে আমার জন্য পাগল ছিল। যে আমাকে বলতো তোমাকে না পেলে আমি মরে যাবো। যার জন্য সব ছেড়ে চলে এসেছিলাম, নিজের সব স্বপ্ন বির্সজন দিয়েছিলাম আজ সে আমাকে ডিভোর্সের কথা বলছে। যাকে হারানোর ভয়ে এতোদিন কিছু বলতে পারি নি সে আজ আমার কথা একবারো ভাবলো না। চোখের পানি অনবরত পড়ছিলো আমার। মেঝেতে বসে অনবরত কাঁদছি। যে বলতো তোমার চোখের পানি আমার সহ্য হয় না সেই আদিলের চোখে আজ আমার কান্না কিভাবে সহ্য হচ্ছে। ঐদিন অনেক কেঁদেছিলাম। তারপর নিজেকে সামলে নেই। যে আমাকে তিল তিল করে মেরে ফেলছে তার জন্য আর এক ফোটাও চোখের পানি ফেলবো না। যার কাছে আমার কোন দাম নেই তার জন্য কেন কাঁদছি। নিজেকে শক্ত করে নিই আমি।

পরদিন হাসিমুখে ডিভোর্সটা দিয়ে দিই। আমি হাসির রহস্য খুজছিলো আদিল। যে আমাকে কষ্ট দিয়ে সুখী হতে পারবে থাক না সে সুখী। হাসিমুখে ছেড়ে চলে আসি আমার সাজানো সংসার। ছেড়ে চলে আসি আমার ভালোবাসাকে। জানি আদিলকে ভুলতে অনেক কষ্ট হবে। যাকে এতো ভালোবেসেছি তাকে হঠাৎ করেই তো ভুলে যেতে পারবো না। যখন বাবা-মার কাছে ফিরে যাই মা আমাকে আপন করে নিলেও বাবা কিছুদিন রাগ করে ছিল। সমাজে অনেক মানুষের অনেক কথা শুনতে হয়েছে আমায়। অনেক কথা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে কিন্তু আর পিছনে তাকায় নি আমি।

পড়ালেখাটা আবার শুরু করি। ২বছর পিছিয়ে পড়াশোনায় সবকিছু সামাল দিতে একটু কষ্ট হয়েছিলো আমার। মেডিকেলে পড়াশোনা শেষ করে এখন আমি হসপিটালে গাইনোলোজিষ্ট ডাক্তার হিসেবে জয়েন করি।

৭ বছর পর হঠাৎ করে আদিলকে হসপিটালে দেখতে পেয়ে আমি রীতিমতো চমকে ওঠেছিলাম। পরে জানতে পারলাম সে আমার প্যাসেন্ট সুমির স্বামী। সুমিই সেই ধনী বাবার মেয়ে যাকে বিয়ে করার জন্য আদিল আমাকে ডিফোর্স দিয়েছিলো। ৫ বছরের সংসার তাদের। এখনো তাদের কোনো সন্তান হয়নি। আমাকে সুমির ডাক্তার হিসেবে দেখে আদিলও অবাক হয়েছিলো। কিছু একটা বলতে চেয়েও বলতে পারলো না সে। আমি তাদের সাথে আমার প্যাসেন্টের মতোই আচরণ করি। তাদের বিভিন্ন টেস্ট দিই আমি। টেস্টের রিপোর্ট দেখে তাদের জানালাম সুমির কোনো কোনো সমস্যা নেই। তবে আদিল আর কখনো বাবা হতে পারবে না, সে ক্ষমতা আদিল হারিয়ে ফেলেছে। কথাটা আদিল শুনার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলো না। মনে অনেকটা কষ্ট নিয়ে বাসায় চলে যায় তারা।

কিছুদিন পর আজ আদিল আবার আমার কেবিনে আসে। আদিলকে এভাবে দেখে অবাক হয়েছিলাম আমি। অনেক কান্নাকাটি করে সে আমার সামনে। তার করা ভুলগুলোর জন্য আমার কাছে মাফ চায়। এটাও বলে যে সুমি তাকে ডিফোর্স দিতে চলছে। তার কান্না দেখে কিছুটা কষ্ট হলেও কষ্টের থেকে মনে খুশিটা বেশি ছিলো। মনে হচ্ছিলো আমাকে দেওয়া প্রতিটা কষ্টের প্রতিশোধ ওপরওয়ালা এখন নিচ্ছে। তার সব কর্মের ফল সে এখন পাচ্ছে।
আমার এতোদিনের অপূর্ণতাটা যেন আজ আদিলকে দেখে পূর্ণ হয়ে গেলো।

----------------সমাপ্ত-------------------