শক্রুর সাথে বিয়ে
পর্ব-২
লিখা-আয়েশা
রাত আটটা বেজে গেল কোন খবর নেই লোকটার।ফোনটাও বন্ধ।ভয় করছে আমার কাল রাতে চড় মেরেছি তাই হয়তো অনেক রাগ করেছে।
রাত দশটা আবার ফোন দিলাম এবার ফোন বেজে উঠলো।আমার মনটা শান্তি পেল।একবার রিং হয়ে কেটে গেল আবার দিলাম এবার ধরল
কিন্তু একটা মহিলা কন্ঠস্বর শোনা গেল ফোন ধরে বললো
__হ্যালো কে বলছেন?
__আমি কে তা আপনি জেনে কি করবেন
__ফোনটা কি আপনার?
__ জি না তাহলে আপনার কাছে কেন এই ফোন।
__যার ফোন সে যে আমার কাছেই তাই।আচ্ছা আপনি কি ওনার স্ত্রী?
__আমি কে তা যার ফোন,তার থেকে জেনে নিবেন। আমি জানি আর শুনুন আপনার স্বামী সারাদিন আমার সাথেই ছিল।
__আপনার সাথে বা অন্য যার সাথেই থাকুক না কেন তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
এটা বলেই ফোন রেখে দিলাম আর বাবাকে বললাম খুব একটা ভালো ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছো।
কি হয়েছে খুলে বলবি তো বাবা বললো
__এই মুরাদ তোর ফোন আসছিল
__কে?
__ তোর বৌ
__কি আমার বৌ বিশ্বাস হচ্ছে না।তুই ধরে কি বললি __বললাম আপনার স্বামী সারাদিন আমার সাথেই ছিল __হায় হায় এ তুই কি বলেছিস এমনিই ও আমাকে পছন্দ করে না এর উপরে আবার,উফফ খুব ঝামেলায় ফেললি তুই আমাকে।
__ভাল করেছি কত বড় বেয়াদব বাসর রাতে স্বামীকে চড় মারে
__তুই সরে যা আমার সামনে থেকে এমনিতেই বিপদে আছি তুই সালা আরো বিপদে ফেলে দিলি কি মনে করবে ও আচ্ছা যাই এখন।
__ ঠিক আছে যা আবার বৌয়ের হাতে মার খেতে
মুরাদ বাড়িতে আসলো বাবা কাছে ডেকে বললো শোন বাবা,কোথায় ছিলি সারাদিন?
আচ্ছা নিতু এখন তোর বৌ ওর সাথে রাগ করে সারাদিন বাইরে থাকাটা ঠিক হয় নি।
__সরি মামা
__ আচ্ছা এখন যাহ্ ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নে
আমি তোকে ভালো ছেলে হিসেবেই জানি।এমন কিছু করবি না যাতে আমাকে নিতুর কাছে লজ্জিত হতে হয়
এদিকে আমার কেমন যেন লাগছে মুরাদ একটা মেয়ের সাথে আছে শুনে।কেন এরকম লাগছে আমি তো ওকে পছন্দ করি না।এসব ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে আসল।
মুরাদ ওয়াশরুম থেকে আমার সামনে এসে চুল ঝাড়া দিল।ওকে দেখে মনটা কেমন যেন শান্তি পেল সারাদিন ফোন না ধরায় খুব চিন্তিত ছিলাম।মনে পরে গেল ও একটা মেয়ের সাথে ছিল
__ওফফ কি হচ্ছে এসব
__কি আবার কিছুই না
__ এই কোথায় ছিলে সারাদিন?
__ছিলাম আমার যেখানে ইচ্ছা সেখানে তোকে বলতে হবে
__অবশ্যই হবে কারন আমি তোমার....
__কি থামলি কেন তুই আমার কে যে তোকে বলতে হবে
__আমি বাবার জন্য বলছি অনেক টেনশন করেছে সারাদিন
__শুধু বাবাই টেনশন করেছে আর তুই টেনশন করিস নি
__তোমার জন্য টেনশন করতে আমার বয়েই গেছে
আমাকে টান দিয়ে ওয়ালে ঠেকিয়ে আমার হাত চেপে ধরে রেখেছে আমার কেমন যেন লাগছে এতটা কাছে কোনদিন আসা হয় নি কোন ছেলের।কারন আমার জীবনে কোন প্রেম ছিল না।ও আমার ঠোঁটের কাছে ওর মুখ নিয়ে আসলো অনেক কাছে নিশ্বাস শোনা যাচ্ছে একজন আরেকজনার
আমি অনেক শক্তি দিয়ে একটা ধাক্কা দিলাম আর বললাম শোনো কোনদিন আমাকে স্পর্শ করার দুঃসাহস করবে না এর মধ্যে দেখি আমাদের কাজের মেয়ে লতিফা চা নিয়ে এসেছে।আমরা স্বাভাবিক হয়ে গেলাম।
লতিফা বাবাকে বললো
__আচ্ছা খালুজান আফা দুলাভাইরে সহ্য করতে পারে না কেন উফরে যাইয়া দেখলাম দুইজনে ঝগড়া করতাছে।আর কিয়ের এত শত্রুতা হেগো মধ্যে
__আরে বলিস না ছোটবেলায় মুরাদ ওকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিয়েছিল নিতু মরে যায় যায় অবস্থা সেই থেকে নিতু মুরাদকে সহ্য করতে পারে না শত্রু ভাবে মনে করে আবার ওকে মেরে ফেলার চেষ্টা করবে।
__ও এই কতা, হায় রে আফা।আচ্ছা খালুজান একটা কতা কই ঐ যে বিয়ের পরে যে যায় কি জানি কয় ও মনে পরছে হানিমুন।হেগো দুইজনরে ঐহানে পাডাইয়া দেন তাইলে মনে হয় আফার রাগ কমতে পারে
__খুব সুন্দর একটা বুদ্ধি দিয়েছিস মা এটাই করবো
বিকেলে আমাদের দুইজনকে ডেকে বাবা বললো _তোমাদের জন্য টিকিট ঢাকা টু কক্সবাজার।
__কিসের টিকিট আমি বললাম।
__হানিমুনে যাবে তোমরা,ওখান থেকে ঘুরে আসো মন ভালো লাগবে।
__ঠিক বলেছো বাবা আমার একটু সমুদ্রের পাড়ে যাওয়া দরকার কিন্তু আমি একা যাবো কারোর সাথে নয়
__চুপ নতুন বিয়ে হয়েছে ও একা যাবে আমি ছাড়ি তোকে একা।এই মুরাদ তুই ওর সঙ্গে যাবি ওকে দেখে রাখবি
__জী মামা অবশ্যই এটা আমার কর্তব্য
__আমি জানি না তোমাদের যা ইচ্ছা তাই করো
সেদিন রাতের টিকিটে বাসে উঠলাম আমরা।আমি জানালার পাশে বসে আছি রাতে চাঁদের আলোয় সবকিছু সুন্দর লাগছে শুধু পাশের মানুষটা ছাড়া।রাতে ঘুমিয়ে শুধু বারবার ওর ঘারে পড়ে যাচ্ছিলাম রাগ উঠছিল নিজের উপর এত ঘুম আসছে কেন আজ।মুরাদ চুপচাপ কিছু বললো না।হয়তো আমার অপমানে একটু রেগে আছে।
সকাল নয়টায় হোটেলে গিয়ে পৌছালাম।আমি রিসিপশনে গিয়ে বললাম টু বেডের একটা রুম দিন।মুরাদ বললো না ওয়ান বেড।আমি বললাম না টু।মুরাদ বললো মামাকে ফোন দিলাম কিন্তু।না না ওয়ান বেডেরই দিন আমি বললাম।শুধু বাবার অসুস্থতার কথা ভেবে রাজি হলাম ফিসফিস করে বললাম।
রুমে এসে বললাম
__এক বেড যে নিছেন আপনি ঐ সোফায় শোবেন
__জী মহারানী আপনি যা বলবেন।আর এত সুন্দর বৌয়ের কথা ফেলতে পারি।সোফায় শুয়ে শুয়ে আপনাকে দেখব
__কিহ্ আমার দিকে তাকাতে পারবে না নইলে খবর আছে
__চুপ মামা বলছে তোকে ঠিকমতো দেখে রাখতে তো দেখবো না
একথা শুনে খুব ভয় করলো এখানে এসে ও যদি বাড়াবাড়ি করে।সারাদিন জার্নি করেছি তাই খেয়ে শুয়ে আছি।আমি অনুভব করলাম কেউ আমার কাছে আসছে আমি লাফ দিয়ে উঠলাম ওহ্ স্বপ্ন ছিল।দেখলাম ও সোফায় ঘুমাচ্ছে।
বিকেলে গেলাম একটু বীচে।ওখানে যাওয়ার পর হঠাৎ মুরাদকে কে যেন ডাক দিল ঘুরে দেখলাম একটা মেয়ে।
__মুরাদ বললো নিতু ও সুমা,সুমা ও আমার ওয়াইফ।__ওহ্ ফোনে কথা হয়েছিল আমাদের মেয়েটি বললো
আমি মনে মনে বললাম ভালোই তো এখানেও দাওয়াত করে আনা হয়েছে..................................