সিনিয়র
লেখা অধরা জেরিন
সবে মাত্র শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে চুলে শ্যামপু লাগিয়েছি এর মধ্যে মোবাইলের রিংটোনের শব্দ কানে এলো। এভাবে একবার দু বার অনেক বার বেজে চলেছে। মনে মনে খুব বিরক্ত হলাম। লোকটার কোনো কমন সেন্স নেই। ফোন যখন ধরছি না নিশ্চয়ই বোঝা উচিত ছিল আমি বিজি।
তাড়াহুড়ো করে শাওয়ার শেষ করে চুলে তাওয়ালে পেঁচিয়ে বাইরে চলে এলাম। ফোন টা হাতে নিয়ে বুঝতে পারলাম যা ধারণা করেছিলাম ঠিক তাই। রাহাত অজস্র বার ফোন দিয়েছে। ওর সাথে দেখা করেই তো একটু আগে বাসায় এলাম। এর মধ্যে কি এমন দরকার হলো যে ফোন করতে হলো। ফোন টা রাখতে যাবো এর মধ্যে আবার কল এলো। রিসিভ করলাম। ও পাশ থেকে চিৎকার করে রাহাত বললো,,,
-- কখন থেকে ফোন করে যাচ্ছি কোথায় ছিলে?
-- আরে বাবা কোথায় আর থাকবো শাওয়ার নিচ্ছিলাম। বলো কি এমন আর্জেন্ট এতো ফোন করছো?
-- তোমার সাথে দেখা করতে চাই খুব দরকার।
-- একটু আগেই তো তোমার সাথে দেখা করে বাসায় এলাম। এর মধ্যে কি এমন হলো?
--ওহহহ অবনী এতো কথা বলার সময় নেই দেখা করবো ব্যাস৷
--রাহাত তুমি জানো না বিকেলের ট্রেন এ মা আসছে তোমার আমার বিয়ের কথা পাকা করতে। একটু পর মাকে আনতে স্টেশন যেতে হবে। যা বলার কাল বলো।
-- আচ্ছা ঠিক আছে আমি ও ওখানে আসছি। তুমি কিন্তু একটু ও দেরি করবে না। এখনি চলে আসো।
--এখনো তিন ঘন্টা বাকি রাহাত। আমি সময় মতো চলে যাবো।
আমার কথা শেষ হবার আগেই ফোন টা কেটে দিলো।
আমি স্টেশন এ যেয়ে দেখি রাহাত পায়চারী করছে। আমি ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। কাছে গিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম,,
-- কি ব্যাপার এতো দরকারী কথা হঠাৎ করে? কোনো সমস্যা?
রাহাত আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বললো,,
-- অবনী তুমি এতো সুন্দর ক্যান? আমি একটা মুহূর্ত তোমাকে ছাড়া থাকতে কেন পারি না?
ওর কথা শুনে হেসে দিলাম। বুঝে গেলাম ওর পাগলামি। আসলে ও অনেক পাগল বড্ড বেশি ভালোবাসার পাগল। এমন একটা ভালোবাসার মানুষ পেয়ে আমি সত্যি ভিষণ সুখী।
আমার মায়ের রাহাত কে ভিষণ পছন্দ হলো। আমাদের বিয়ে ঠিক হলো ১৫ মার্চ। রাহাতের পরিবার ও ভিষণ খুশি
সে দিন অবনীর মায়ের মুখে কথায় কথায় রাহাত জানতে পারলো অবনী রাহাতের বড়ো আপুর বয়সী। রাহাতের বড়ো আপুর মেয়ে এ বছর এস এস সি দিয়েছে। তাহলে অবনীর এতো দিন বিয়ে হলে ও রকম একটা বাচ্চা থাকতো।
রাহাত ওর বন্ধু পরশের কাছে গিয়ে সব বললো।
পরশ শুনে ওকে বললো,,
-- এতে সমস্যা কি রাহাত। অবনী তোর বড়ো আপুর বয়সী কিন্তু মেয়েটা তোকে অনেক ভালোবাসে।
রাহাত আরো রেগে গিয়ে বললো,,
-- পরশ তুই বুঝতে পারছিস অবনী আমার কতো সিনিয়র। আমার কোনো দিন সন্তান হবে?
--তুই কি পাগল হলি রাহাত। চৌদ্দ পনেরো বছরের মেয়ে বিয়ে করলেই যে তোর সন্তান হবে এর কোনো গ্যারানটি আছে।
--তুই যাই বলিস অবনী কে আমার বিয়ে করা সম্ভব না। ও আমার কতো সিনিয়র ওর মতো একটা মেয়ে বিয়ে করা পসিবল না।
--তাহলে তুই কি অবনীর বয়স কে ভালোবেসে ছিলি?
--এতো কথা জানি না ১৫ মার্চ ই আমার বিয়ে হবে তবে ওটা অবনীর সাথে না। শোন আমি আজই গ্রামে চলে যাচ্ছি তুই অবনী এলে বলবি না আমি কোথায় আর তুই কিন্তু চলে যাস বিয়ের আগের দিন।
এই বলেই রাহাত চলে গেলো।
ওদিকে অবনী বার বার ফোন করে রাহাতের ফোন বন্ধ পাচ্ছে। কি হলো রাহাতের। হঠাৎ ও কেন এমন করছে। তাহলে কি রাহাত বিয়েতে রাজি না।
অবনী পরশের কাছে একদিন জিজ্ঞেস করলো,
--কেমন আছেন পরশ ভাই?
--আরে অবনী যে,, ভালো আছি তুমি কেমন আছো?
-- রাহাতের কোনো খোঁজ জানেন?
-- কেন ও তোমাকে কিছু বলেনি?
-- নাতো ওর ফোন ও বন্ধ পাচ্ছি।
-- রাহাতের তো ১৫ মার্চ বিয়ে। তবে সেটা তুমি না,,,,,,, অন্য,,
-- কি বলছেন আপনি? কিন্তু এটা কেন করলো রাহাত?
-- অবনী পৃথিবীতে অনেক রকমের মানুষ আছে। কেউ খোঁজে সত্যি কারের ভালোবাসা কেউ খোঁজে সুন্দরতা কেউ খোঁজে টাকা পয়সা। রাহাত তোমার মাঝে কি খুঁজে ছিল আমি বলতে পারবো না।
-- পরশ ভাই আমি চলে যাচ্ছি রাহাত এলে বলবেন আমি ওকে ক্ষমা করে দিয়েছি। ও যেভাবে ভালো থাকতে চায় আমার কোনো বাধা নেই।
এই বলেই পরশের কাছ থেকে চলে এলাম। শুধু একটা কথা রাহাতের কাছে আমার জানার বড়ো ইচ্ছে ছিল আসলে ও কাকে বেশি ভালোবেসে ছিল আমাকে নাকি আমার বয়স কে???